কক্সবংলা ডটকম(১ মার্চ) :: রংপুরকে হারিয়ে বিপিএল দশম আসর শুরু করেছিল ফরচুন বরিশাল। পরের তিন ম্যাচে টানা পরাজয়। প্লে অফ নিশ্চিতে কীর্তণখোলা পাড়ের দলটিকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল নিজেদের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত। প্লে-অফে আর ঘুরে দাঁড়াতে হয়নি তাদের।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে হারিয়ে কোয়ালিফায়ারে, সেখানে রংপুর রাইডার্সকে ফাইনাল নিশ্চিত করা। শিরোপার মহারণে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স পাত্তাই দেয়নি দলটি। বল হাতে ধমিয়ে রাখার পর ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছিল বরিশালের ক্রিকেটাররা। তামিমের হাত ধরে বিপিএলের প্রথম শিরোপা ঘরে তুলল বরিশাল।
পাশাপাশি ব্যাট হাতে পাঁচশর কাছাকাছি রান। সেইসঙ্গে ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা জয়। ব্যক্তিগত ও দলীয় সাফল্যের সম্মিলনে বিপিএলের দশম আসরের সেরা খেলোয়াড় হলেন তামিম ইকবাল।
২০২২ আসরে এই কুমিল্লার কাছে ১ রানে হেরেই শিরোপা বঞ্চিত হয়েছিল বরিশাল। এবার তার জবাব দিয়েছে তারা। তামিম-মিরাজ ঝলকের পর কাইল মায়ার্সের ঝড়ো ফিফটিতে ৬ উইকেটে জয় পেয়েছে বরিশাল। অন্যদিকে প্রথমবার ফাইনালে হার দেখল চারবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে কুমিল্লাকে ব্যাটে পাঠান বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবাল। নির্ধারিত ওভার শেষে ৬ উইকেটে ১৫৪ রান সংগ্রহ করে লিটন দাসের দল। জবাবে নেমে এক ওভার হাতে রেখে জয়ের বন্দরে নোঙর করে বরিশাল।
রানতাড়ায় নেমে প্রথম ব্যাট থেকে মাত্র ১ রান পায় বরিশাল। তবে কুমিল্লার বোলার তানভীর ইসলাম অতিরিক্ত রান দেন ১১টি। যার মধ্যে ছিল দুটি বাই চার, ও তিনটি ওয়াইড।
দ্বিতীয় ওভারে রোহনাত দৌলা বর্ষণের প্রথম বলে চার আদায় করেন তামিম। দ্বিতীয় বলে সিঙ্গেল নিয়ে মিরাজকে স্ট্রাইকে পাঠান। তৃতীয় বলে চার ও চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকান মিরাজ। ওই ওভারে আসে ১৫ রান।
তৃতীয় ওভারে তানভীরকে দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে ১৪ রান তোলেন তামিম। চতুর্থ ওভারে নারিন দেন ৩ রান। পঞ্চম ওভারে ৬ রান দেন মোস্তাফিজ। ষষ্ঠ ওভারে নারিনকে একটি ছক্কা হাঁকিয়ে ৯ রান তোলেন তামিম-মিরাজ।
অষ্টম ওভারে প্রথম উইকেটের দেখা পায় কুমিল্লা। ওভারের শেষ বলে প্রথম আঘাত হানেন মঈন আলী। সরাসরি বোল্ড করে ফেরান তামিমকে। তিনটি করে চার ও ছক্কায় ২৬ বলে ৩৯ রান করেন ফরচুন বরিশাল অধিনায়ক। ১০ ওভারে নিজের দ্বিতীয় ওভারে আসেন ইংলিশ অলরাউন্ডার। ওভারের তৃতীয় বলে মিরাজকে ফেরান জনসন চার্লসের ক্যাচ বানিয়ে। এক চার ও দুই ছক্কায় ২৬ বলে ২৯ রান করেন মিরাজ।
৮২ রানে দুই ব্যাটার ফেরার পর আর কোনো উইকেট হারাতে হয়নি বরিশালের। মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গী করে ঝড় তোলেন মায়ার্স। জয় থেকে ১৪ রান দূরে থাকতে মায়ার্সের উইকেট তুলেন মোস্তাফিজুর রহমান। পাঁচটি চার ও দুটি টি ছক্কায় ৩০ বলে ৪৬ রান করেন মায়ার্স।
মায়ার্স ফেরার পর মোস্তাফিজের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরে যান মুশফিকুর রহিম। ১৭ বলে ১৩ রান করেন এই উইকেট রক্ষক ব্যাটার।
পরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও ডেভিড মিলার বরিশালকে জয়ের বন্দরে পৌঁছান। মিলার ৭ বলে ৮ রান করেন। আর মাহমুদউেই অপরাজিত থাকেন ৭ বলে ৭ রানে।
কুমিল্লার হয়ে মঈন আলী ৪ ওভারে ২৮ রান খরচায় নেন দুটি উইকেট। ৪ ওভারে ৩১ রান খরচায় মোস্তাফিজও নেন দুটি উইকেট।
এর আগে ব্যাটে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি চারবারের চ্যাম্পিয়নদের। ইনিংস শুরু থেকেই খেই হারাতে দেখা গেছে ব্যাটারদের। প্রথম ওভারে ঝলক দেখানোর আগেই সাজঘরে ফিরে যান বাঁহাতি ওপেনার সুনিল নারিন। তার পথ অনুসরণ করেন টপঅর্ডারের বাকি ব্যাটাররাও।
কুমিল্লার অধিনায়ক লিটন দাস দ্বিতীয় ওভারে ঝড় তোলার চেষ্টা করেন। তার সাথে যোগ দেন তাওহীদ হৃদয়। দ্বিতীয় ওভারে এ দুই ব্যাটার তিনটি বাউন্ডারি মেরে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিলেও সেটা ধরে রাখতে পারেননি দুজনের কেউ। লিটন ১৬ এবং হৃদয় ১৫ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন।
জনসন চার্লস প্রথম থেকে নার্ভাস থাকলেও দুটি ছক্কা হাকিয়ে নিজের স্বকীয়তা জানান দেয়ার চেষ্টা করেন। তবে এ ব্যাটারও বরিশালের বোলারদের সামনে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, আউট হওয়ার আগে ১৫ রান করেন। ইনিংস বড় করতে পারেননি মঈন আলীও। রানআউট হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন ৩ রান করে।
ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন জাকের আলী অনিক ও মাহিদুল ইসলাম। এ দুজন ২৯ বলে ৩৬ রানের জুটি গড়েন। শেষ দিকে ঝড় তোলেন আন্দ্রে রাসেল। ১৯তম ওভারে জেমস ফুলারের ওভারে তিনটি ছক্কা মারেন। তিনি খেলেন ১৪ বলে অপরাজিত ২৭ রানের ইনিংস। এছাড়া জাকের আলী ২০ রানে অপরাজিত থাকেন।
বরিশালের ফুলার ৪ ওভারে ৪৩ রানে ২ উইকেট নেন। এছাড়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন, কাইল মায়ার্স ও ওবেদ ম্যাককয় নিয়েছেন একটি করে উইকেট।
বিপিএলের নতুন চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল। টুর্নামেন্টের ১০ম আসরে শিরোপার আক্ষেপ ঘুচাল বরিশালের দলটি। বরিশালকে শিরোপা উপহার দিয়ে টুর্নামেন্ট সেরা হন অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
বাংলাদেশ দলের এই তারকা ওপেনার বিপিএলের সদ্য শেষ হওয়া আসরে ১৫ ম্যাচে অংশ নিয়ে তিনটি ফিফটির সাহায্যে সর্বোচ্চ ৪৯২ রান করে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জিতে নেন।
এবারের বিপিএলে রেকর্ড ৫৪টি বাউন্ডারি হাঁকান তামিম। আর ১৮টি ওভার বাউন্ডারি হাঁকান তিনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর ফিরবেন কিনা বিপিএলের মাঝেই জানাবেন বলেছিলেন তামিম ইকবাল। তবে বিপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েও এই ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলেননি তিনি। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক জানিয়েছেন, বিসিবির কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় তার ফেরা নির্ভর করছে অনেক কিছু ‘ঠিক’ হওয়ার উপর।
গত বছর জুলাই মাসে আফগানিস্তান সিরিজের মাঝে হুট করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তামিম। একদিন পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন তিনি। এরপর সেপ্টেম্বরে বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ড সিরিজে ফিরে খেলেন দুই ম্যাচ।
এরপর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে বিরোধের সূত্র ধরে নানান নাটকীয়তায় আর বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকেননি তিনি। এরপর থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে আছেন তামিম। বিশ্বকাপের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরে-বাইরে দুটি সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও আসন্ন সিরিজের দল ঘোষণা হয়ে গেছে। তামিম তাতে নেই।
শুক্রবার ফরচুন বরিশালের হয়ে বিপিএল জিতে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার প্রশ্ন উঠে। উত্তরে তামিম রেখে দেন ধোঁয়াশা। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুসের সঙ্গে আলোচনা করার কথা থাকলেও নানান কারণে সেটা হয়ে উঠেনি, ‘না, আমার সঙ্গে তার কোনো কথাবার্তা হয় নাই।
আমার সঙ্গে জালাল ভাইয়ের কথা হয়েছে। আমি কথা বলার জন্য এভেইলেবল ছিলাম কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সম্ভবত…আমার সঙ্গে বসার কথা ছিল। কিন্তু আমাদের যোগাযোগ আছে। আমি আগামীকাল সকালে আবার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছি। আশা করি আসার পর আবার আমরা বসবো।’
এরপর তামিম জানান, তার আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে হলে অনেক কিছু ঠিক হতে হবে, ‘একটা জিনিস পরিষ্কারভাবেই আপনাদের বলতে চাই- আমার জন্য ফিরে আসা অনেক কিছু ঠিক হতে হবে।
নয়তো শুধু এসে খেলার কোনো পয়েন্ট নাই। কারণ আমি ক্যারিয়ারের এমন স্টেজে আছি- হয়তো দুই বছর খেলবো (সব মিলিয়ে)। ওই কথাগুলো উনাদের সঙ্গে বলতে হবে।’
‘এখনও যেহেতু উনাদের সঙ্গে চূড়ান্ত কথা হয়নি। এই সংবাদ সম্মেলনে এসে কিছু বলে দেওয়া উপযুক্ত না। ওটা বলাটা উচিত হবে না।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার মতন অবস্থায় আছেন কিনা এই প্রশ্নে তামিম বলেন, ‘ফিজিক্যালি আমি ওই সময় আরও ভালো ছিলাম। এখন তো একটু পেট-টেট বের হয়েছে দেখছেন। শারীরিকভাবে আমি ওই সময় আরও ভালো অবস্থায় ছিলাম।’
‘আমি যেটা বললাম এটা খুবই আনফেয়ার হবে মন্তব্য করা। আমি যতক্ষণ উনাদের সঙ্গে কথা না বলে থাকি। আমি আপনাদের একটা কথা বলেছি যে, আমার ফেরার জন্য অনেক কিছু ঠিক করতে হবে।’
Posted ১২:১০ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০২ মার্চ ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta